এসো বাংলায় ফ্রিল্যাসিং শিখি

17/11/2009 19:12

 একটা সময় ছিল যখন পড়ালেখা শেষ করে একজন তরুণকে একটি চাকুরির জন্য বিভিন্ন কোম্পানীর দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হত । কিন্তু চাকুরী যেন সোনার হরিণের মত অধরা থেকে যেত । যদিওবা চাকুরি পাওয়া গেল, এর সেঙ্গে কোন সম্পর্ক থাকত না অর্জিত শিক্ষার । পাওয়া যেত না উপযুক্ত সন্মান । আর এখন তরুণরা একটা চাকুরির জন্য বসে নেই, নিজেরাই খুজে নিচ্ছে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের চাকা । ভাবছেন স্বপ্ন দেখাচ্ছি ? না । ইন্টারনেটে ফ্রিল্যান্স আউটসোসিং এর বদৈালতে ঠিক এরকম একটা ব্যাপার আমাদের ঘটাতে যাচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে । ইতোমধ্যে আমাদের দেশে এরকম কয়েকশ অনলাইন ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন যারা নিয়মিত ভাবে আউটসোসিং এর কাজগুলো করে থাকেন । এদের মধ্যে অনেকে রয়েছেন যারা পড়ালেখা শেষ করে কোনো চাকুরিতে যোগ না দিয়ে সরাসরি অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করছেন । অনেকে আবার অন্যদের জন্য কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করছেন । কিন্তু ব্যাপারটা বেশিরভাগের কাছে পরিস্কার না হওয়ায় আউটসোসিং এর বিশাল বাজারে আমরা সেইভাবে প্রবেশ করতে পারিনি । তাই ফ্রিল্যান্স আউটসোসিং নিয়ে সম্পূন্ন বাংলায় লেখা প্রকাশ করছি ।

 আউটসোর্সিং কী :
প্রথমেই দেখে নেয়া যাক আউটসোর্সিং এবং অফশোর আউটসোর্সিং(Offshore Outsourcing) কী এবং কেন করা হয় । আউটসোর্সিং হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠানের কাজ নিজেরা না করে তৃতীয় কোন প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে করিয়ে নেয়া । এই কাজ হতে পারে পণ্যের শুধু ডিজাইন করা অথবা সম্পূর্ণ উৎপাদন অন্য প্রতিষ্ঠান দিয়ে করিয়ে নেয়া । আউটসোর্সিং এর সিদ্ধান্ত সাধারনত নেয়া হয় পণ্যের উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য । অনেক সময় পর্যাপ্ত সময়, শ্রম অথবা প্রযুক্তির অভাবেও আউটসোর্সিং করা হয় । অন্যদিকে অফসোর আউটসোসিং হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠানের কাজ নিজ দেশে সম্পন্ন না করে ভিন্ন দেশ থেকে করিয়ে আনা । প্রধানত ইউরোপ এবং আমেরিকার ধনী দেশগুলো অফসোর আউটসোর্সিং করে থাকে । যার মূল্য লক্ষ্য হচ্ছে পর্ণ্যের গুনগত মান ঠিক রেখে কম পারিশ্রমিকের মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করা । মূলত তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর কাজগুলো ( যেমন: ডাটা প্রসের্সিং, প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, মাল্টিমিডিয়া, টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইত্যাদি) অফসোর আউটসোর্সিং করা হয় । যেসব দেশ এ ধরনের সার্ভিস প্রদান করে থাকে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ভারত, ইউক্রেইন, ফিলিপিনস, রাশিয়া, বাংলাদেশ, পাকিস্তান,পানামা, নেপাল, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, রুমানিয়া, মালয়েশিয়া, মিশর ইত্যাদি ।

 

ফ্রিল্যান্সিং :

এবার দেখে নেয়া যাক, ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) কি এবং কিভাবে একজন ফ্রিল্যান্সার হওয়া যায় । ফ্রিল্যান্সার হচ্ছেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে দীর্ঘস্থায়ী চুক্তি ছাড়া কাজ করেন । একজন ফ্রিল্যান্সারের যেরকম রয়েছে কাজের ধরন নির্ধারনের স্বাধীনতা । গতানুগতিক ৯টা ৫টা সময়ের মধ্যে ফ্রিল্যান্সার সীমাবদ্ধ নন । ইন্টারনেটের কল্যাণে ফ্রিল্যান্সি এখন একটি নির্দিষ্ট স্থানের সাথেও সম্পর্কযুক্ত নয় । আপনার সাথে যদি থাকে একটি কম্পিউটার আর একটি ইন্টারনেট সংযোগ তা হলে যে কোন যায়গায় বসেই আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন । হতে পারে তা ওয়েবসাইট তৈরী থ্রিডি এনিমেশন, ছবি সম্পাদনা, ডাটা এন্টি বা শুধুমাত্র লেখালেখি করা ।

ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস :


ইন্টারনেটে অনেকগুলো জনপ্রিয় ওয়েবসাইট রয়েছে যারা আউটসোর্সিং এর সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় । এই সকল সাইটকে বলা হয় ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস । ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস সাইটে দুই ধরনের ব্যবহারকারী থাকে । এসব ওয়েবসাইটে যারা কাজ জমা দেয় তাদেরকে বলা হয় Buyer বা Client এবং যারা কাজগুলো সম্পন্ন করে তাদেরকে বলা হয় Freelancer, Provider, Seller, অথবা কোন কোন ক্ষেত্রে Coder একটি কাজ পাবার জন্য একাধিক ফ্রিল্যান্সাররা আবেদন করেন , যাকে বলা হয় বিড (Bid) করা । বিড করার সময় ফ্রিল্যান্সাররা কাজটি কত টাকায় সম্পন্ন করতে পারবে তা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী উল্লেখ করে । এদের মধ্য থেকে ক্লায়েন্ট যাকে ইচ্ছা তাকে নির্বাচন করতে পারে । সাধারনত কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা, টাকার পরিমান এবং বিড করার সময় ফ্রিল্যান্সারের মন্তব্যের ওপর ভিত্তি করে ক্লায়েন্ট একজন ফ্লিল্যান্সারকে নির্বাচন করে থাকে । ফ্রিল্যান্সার নির্বাচন করার পর ক্লায়েন্ট প্রজেক্টের সর্ম্পূন্ন টাকা ওই সাইটগুলোতে এস্ক্রো (Escrow) নামক একটি একাউন্টে জমা করে দেয়, যা কাজ শেষ হবার পর সাথে সাথে ফ্রিল্যান্সারের পাওনা পরিশোধের নিশ্চয়তা প্রদান করে । কাজ শেষ হবার পর সাথে সাথে ফ্রিল্যান্সারের পাওনা পরিশোধের নিশ্চিয়তা প্রদান করে । কাজ শেষ হবার পর ফ্রিল্যান্সারকে সম্পূর্ণ প্রজেক্টেটি ওই সাইটে জমা দিতে হয় । এরপর ক্লায়েন্ট তখন সাইটে একটি বাটনে ক্লিক করে কাজটি গ্রহণ করে । সাথে সাথে এস্কো থেকে অর্থ ওই সাইটে ফ্রিল্যান্সারের একাউন্টে জমা হয় । সম্পূর্ন সার্ভিসের জন্য এসময় ফ্রিল্যান্সারকে কাজের একটা নির্দিষ্ট অঙশ (১০% বা ১৫%) ওই সাইটকে ফি বা কমিশন হিসেবে দিতে হয় । এরপর মাস শেষে সাইটটি ফ্রিল্যান্সারের আয়কৃত অর্থ বিভিন্ন পদ্ধতিতে তার কাছে প্রেরণ করে ।
নিচে কয়েকটি ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস সাইটের বিভিন্ন বৈশিষ্ট তাদের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল :
গেট-এ-ফ্রিল্যান্সার

(www.GetAFreelancer.com)

বৈশিষ্ট্য :
· এই সাইটে রেজিষ্ট্রেশনকৃত মোট প্রোভাইডার বা ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা হচ্ছে সাড়ে আট লক্ষের উপর ।
· প্রতিদিন দুইশর উপর নতুন প্রজেক্ট আসে এবং সবমিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে নয় হাজার প্রজেক্ট বিড করার জন্য উন্মুক্ত থাকে ।
· সাইটির সার্ভিস চার্জ হচ্ছে প্রতিটি কাজের মোট অর্থের ১০% ।

অসুবিধাসমূহ :
· এখানে এক্রোতে টাকা জমা রাখা বাধ্যতামূলক নয়, যা সম্পূন্নভাবে বায়ারের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে । এই সাইটে ইচ্ছেমত বিড করা যায় বা । একজন সাধারন মেম্বার প্রতি মাসে ১৫টি প্রজেক্টে বিড করলে পরে আর গোল্ড মেম্বারদের জন্য এই সংখ্যা হচ্ছে ১৬০টি ।

সুবিধাসমুহ :
· এই সাইটে মাত্র তিন হাজার সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার রয়েছে যারা অন্তত একটি কাজ সম্পন্ন করছে ।
· প্রতিদিন গড়ে ১৫০টি নতুন প্রজেক্ট আসে এবং এই মুহুর্তে মোট উন্মুক্ত প্রজেক্ট পাওয়া যাচ্ছে ১৮০০টি ।
· সার্ভিস চার্জ অন্যান্য সাইট থেকে তুলনামূলকভাবে কম, মোট অর্থের ৫% ।পরিশোধ করে সার্টিফায়েড প্রোগ্রামার হওয়া যায় ।
· এই সাইটে ফ্রিল্যান্সারদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য একটি ফোরাম রয়েছে ।

অসুবিধাসমুহ :
· গেট এ ফ্রিল্যান্সার সাইতের মত এখানেও এস্ক্রোতে টাকা জমা রাখা বাধ্যতামূলক নয়, যা ব্যায়ারেরর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে ।

 রেন্ট এ-কোডার

 

বৈশিষ্ট :
· এই সাইটের ফিচার গেট এ-ফ্রিল্যান্সার এবং স্ক্রিপ্টল্যান্স থেকে অনেকটা ভিন্ন । যদিও এই সাইটিতে নতুনদের প্রথম কাজ পাওয়া কিছুটা কষ্টসাধ্য কিন্তু এর কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের জন্য অভিজ্ঞ ফিল্যান্সারদের কাছে খুব জনপ্রিয় ।
· রেন্ট এ-কোডার এ প্রায় দুই লক্ষ ত্রিশ হাজার কোডার রেজিষ্ট্রেশন করেছে ।
· এই সাইটে প্রতিদিনই প্রায় ২৫০০এর উপর কাজ পাওয়া যায় ।
· সাধারনত কাজের ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ হচ্ছে মোট টাকার ১৫% এবং বোনাস প্রজেক্টের ক্ষেত্রে এই চার্জ হচ্ছে ১০% । উল্লেখ্য, বোনাম প্রজেক্টে বায়ার এস্ক্রোতে কোন অর্থ জমা রাখে না এবং কাজ শেষে কোডারকে সরাসরি মূল্য পরিশোধ করে ।

সুবিধাসমূহ :
· এস্কোতে অর্থ জমা রাখা এই সাইতে বাধ্যতামূলক । কাজ শুরুর পূর্বে বায়ার প্রজেক্টের সম্পূর্ন অর্থ এস্কোতে জসা রাখে, যা কাজ শেষে কোডারের অর্খ প্রাপ্তি শতভাগ নিশ্চত করে ।
· এই সাইটে একজন ফ্রিল্যান্সার ইচ্ছেমত যে কোন প্রজেক্ট বিড করতে পারে ।
· এই সাইটের নিয়মকানুন অন্য সাইটগুলো থেকে কিছুটা কঠিন । যা পরিশেষে বায়ার এবং কোডারের জন্য একটি সুশৃঙ্থল পরিবেশ প্রদান করে ।

অসুবিধা সমূহ :
· সাইটটির সার্ভিস চার্জ অন্যান্য সাইট থেকে তুলনামূলক ভাবে বেশি ।
· অন্য সাইটের গোল্ড মেম্বার ফিচারের মত কোন সুবিধা নেই ।
· নতুনদের জন্য এই সাইটে আলাদা কোন সুবিধা নেই, ফলে প্রথম কাজ পাওয়াটা এই সাইটে তুলনামূলকভাবে সময়সাটেক্ষ । 
ওডেস্ক
বৈশিষ্ট :
· এই সাইটের ফিচার উপরে উল্লেখিত সাইটগুলো থেকে সম্পূন্ন আলাদা । এখানে প্রোভাইডারকে ঘন্টা হিসেবে কাজের জন্য অর্থ প্রদান করা হয় ।
· কায়েন্ট সাধারনত সম্পূন্ন প্রজেক্টের জন্য বা একটি নিদিষ্ট সময়ের জন এক বা একাধিক প্রোভাইডারকে নিয়োগ করা হয় ।
· কাজ করার মুহুর্তে প্রোভাইডারের ব্যয়কৃত সময় নির্ধারন করার জন্য প্রোভাইডারের কম্পিউটারে একটি সফটওয়্যার চালু রাখতে হয় , যা একটি নিদির্ষ্ট সময় পরপর তার ডেক্টটপের স্ক্রিনশট এবং অন্যান্য তথ্য ক্লায়েন্টের কাছে পাঠায় । ফলে ওই সময় সে কাজ করছেন কিনা ক্লায়েন্ট সহজেই নির্ধারন করতে পারে ।
· এই সাইটে প্রতি কাজের জন্য ১০% অর্থ কমিশন হিসেবে প্রদান করতে হয় ।

সুবিধাসমূহ :

· যেহেতু বেশিরভাগ কাজ ঘন্টা হিসেবে প্রদান করা হয় তাই অন্য সাইটগুলোর তুলনায় এই সাইট থেকে অনেক বেশি পরিমাণে আয় করা সম্ভব ।
· এই সাইটেও অনেক প্রজেক্টে অন্যান্য সাইটের মত সম্পূর্ণ প্রজেক্টের জন্য অর্থ প্রদান করা হয় । ফলে যারা ঘন্টা ধরে কাজ করতে পছন্দ করে না তারাও এই সাইট থেকে কাজ করতে পারবে ।

অসুবিধাসমূহ :

· একটি প্রজেক্টে কাজ করতে প্রতিদিন ফ্রিল্যান্সারকে দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় অনলাইনে লগইন থেকে কাজ করতে হয় । ব্যাপারটা অনেকটা অফিসে কাজ করার মত, যা অনেক ফ্রিল্যান্সাররাই পছন্দ করে না ।
· কাজ করার সময় ওডেস্কের সফটওয়ার একটি নিদির্ষ্ট সময় পর পর প্রোভাইডারের কম্পিউটারের ডেক্টটপের ছবি বায়ারের কাছে পাঠায় যা একজন ফ্রিল্যান্সারের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা খর্ব করে ।