লিনাক্সঃ বাংলাদেশের প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ

04/08/2010 14:24

লিনাক্স বেসড ওপেন সোর্স অপারেটিং সিসটেমগুলোর জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। বহুল ব্যবহৃত বাণিজ্যিক অপারেটিং সিসটেমগুলো বর্জন করে অনেকেই ফ্রী এবং ওপেন সোর্স লিনাক্সের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। এই পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে বাংলাদেশেও। পাইরেটেড উইন্ডোজ এর বদলে আপনিও ব্যবহার করতে পারেন লিনাক্স বেসড যেকোন একটি অপারেটিং সিস্টেম।

linux-technology

লিনাক্স কিঃ

অনেকেই ভাবেন লিনাক্স হলো একপ্রকার Operating System (OS) । কিন্ত আসলে লিনাক্স হলো অপারেটিং সিস্টেম এর ‘কার্নেল’ (karnel)। ‘কার্নেল’ হলো OS এর ‘প্রাণ’। একে প্ল্যাটফরম ও বলা চলে। অর্থাৎ এর উপর ভিত্তি করেই OS তৈরী। লিনাক্স কার্নেলটার উপর ভিত্তি করে বেশ কিছু OS তৈরী হয়েছে। এর কয়েকটি হলো: Ubuntu, Red Hat, Fedora, Linux Mint, Gentoo, Open Suse, Solaris, Sabayon ইত্যাদি। বর্তমানে হোম ইউজের জন্য লিনাক্স কার্নেলের উপর ভিত্তি করে তৈরী সবচেয়ে জনপ্রিয় OS হলো উবুন্টু। এর পরেই জনপ্রিয়তার দিক থেকে আছে ফেডোরা। এখানে একটা কথা উল্লেখযোগ্য, রেড হ্যাট হোম ইউজের জন্য নয়।

উবুন্টু

উবুন্টু

বর্তমানে লিনাক্সের নাম বাংলাদেশে অনেক উচ্চারিত হচ্ছে। কারণ Linux based OS গুলো free, open অর্থাত আপনি ইচ্ছে করলেই এই OS গুলোর যেকোন অংশ এমনকি সম্পূর্ণ অংশ আপনার নিজের ইচ্ছে মত পরিবর্তন করতে পারবেন (অবশ্যই আপনার এ বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে) । অথচ, এই কাজটি যদি আপনি উইন্ডোজ এর কোনো OS এ করতে যান এবং মাইক্রোসফট সেটা জানতে পারে, তবে আপনার বিরুদ্ধে কপিরাইট ভঙ্গের অভিযোগ আনতে তাদের কোনো বাধাই নেই।
লিনাক্সের আর একটা জিনিস হলো, লিনাক্স বেসড OS গুলোর একটি কপি (CD) আপনি unlimited সংখ্যক কম্পিউটারে ইন্সটল করতে পারবেন। তাছাড়া, এই OS গুলোর এক একটি CD (অথবা DVD) এর দাম খুব বেশি নয়। মাত্র ৮০ টাকায় আপনি একটি original OS এর CD পেতে পারেন। এমনকি সম্পূর্ণ বিনামূল্যেও আপনি এই OS এর একটি সিডি পেতে পারেন, যা কিনা আপনার কাছে আসবে সরাসরি Netherland থেকে, এই OS গুলো যারা তৈরী করে, তাদের হেড অফিস থেকে। তাও আবার এটি হলো লিনাক্সের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভার্সন ‘উবুন্টু’। আপনি অর্ডার করে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন আপনার কাছে তা আসবে এবং আপনাকে এর জন্য টাকা খরচ করতে হবে না। এই CD টি unlimited সংখ্যক কম্পিউটারে ইন্সটল করতে পারবেন কোনো প্রকার বাধা ছাড়াই।
অপরদিকে উইন্ডোজের ৫০ টাকার যে সিডি আমরা ব্যবহার করি, তা পাইরেটেড। এর আসল দাম বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১৫০০০ টাকা। বাংলাদেশের বিপক্ষে Windows এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার ব্যবস্হা নিচ্ছে না এর কারণ হলো বাংলাদেশকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই কাজ করার ক্ষমতা(!) দেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালের পর Unlincensed Windows চালিত যেকোন কম্পিউটারের মালিকের বিরুদ্ধে Windows ব্যবস্হা নিতে পারবে। শুধু Windows ই নয়, সকল Software যেগুলো আমরা Crack দিয়ে ব্যবহার করি, এমনকি গেমস্ ও, তারাও জানতে পারলে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে Copyright ভঙ্গের গুরুতর অভিযোগ এনে।
সুতরাং আমাদের এখন থেকেই সতর্ক হতে হবে। অভ্যাস করতে হবে Open Software ব্যবহারের। একটি সহজ সমাধান হতে পারে উবন্টু’র মত Free এবং Open Operating System গুলো ব্যবহার করা। তাই অভ্যাস করুন এবং সতর্ক হোন এখন থেকেই।

উবুন্টু’র অনেক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এর সবচাইতে বড় সমস্যা হলো, এটাতে সাধারণভাবে Windows এর applications গুলো চালানো যায়না। তবে Linux based OS গুলোতে চালানোর জন্য লক্ষ লক্ষ program বা software বানিয়ে চলেছেন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য developer রা। internet থাকলে এগুলো বিনামূল্যে সংগ্রহ করা কোনো সমস্যাই নয়। Linux based OS গুলোতে Windows এর applications চালাতে না পারার কারণ হিসেবে আমি মনে করি: অধিকাংশ executable Software (.exe extension সহ program গুলো) গুলোই free বা open নয়। এর ফলে এগুলো যদি উবুন্টুতে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়, তবে উবুন্টু’র মূল প্রতিজ্ঞা (Ubuntu Promise) ব্যহত হয়। তাই তারা এই OS গুলোর জন্য নিজস্ব Software type তৈরী করেছে, যেগুলো সবসময়ই Open। এই সমস্যাটার জন্যই বেশিরভাগ মানুষ Linux Based OS গুলো ব্যবহার করতে চায় না। কিন্তু আমরা সকলেই যদি এর ব্যবহার শুরু করি, তাহলে এটা কোনো সমস্যাই থাকবে না। Windows যখন প্রথম বাংলাদেশে আসে, তখন কয়জন মানুষ এর ব্যবহার জানত? কয়জন জানত, কোন Software টা দিয়ে কোন কাজ করা যাবে? কিন্তু সকলের ব্যবহারের ফলেই বর্তমানে এটি বাংলাদেশের সর্বাধিক ব্যবহৃত OS ।

একটা জিনিস লক্ষ্য করুন:

উবুন্টু OPEN। অর্থাত, আপনি ইচ্ছে করলেই এর Develop করতে পারবেন। সারা পৃথিবীতে এরকম Developer আছেন কোটি’রও বেশি। অপরদিকে আপনি খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন Windows এ ১,০০০ এর বেশি লোক develop এর কাজে নিয়োজিত কিনা। অনুমতি ছাড়া কেউ এই কাজ করতে গেলেই Windows তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। কেন কেউ এত কষ্ট করে এই কাজ করবে?!
বাংলা ভাষাতেই আপনি পাবেন উবুন্টু এবং লিনাক্স সম্পর্কে হাজার হাজার নিবন্ধ, শত শত ফোরাম। আপনার সমস্যার সমাধানের জন্য অপেক্ষা করছে অনেক স্বেচ্ছাসেবী। আর ইংরেজিতে তো কথাই নেই। আর Windows?! নাই বা বললাম। আপনার নিশ্চয়ই অভিজ্ঞতা আছে, আপনার কপিটি যদি Licensed না হয়, তাহলে আপনি আপনার সমস্যার সমাধান তো পাবেনই না, বরং আপনার ডেস্কটপের নিচের ডান কোনায় আসবে একটি স্হায়ী বার্তা, যা আপনার ডেস্কটপের চেহারাই নষ্ট করে দিবে।
Windows এর restriction নিয়ে আমি যা বললাম, তা কি আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না??? তাই যদি হয়, তাহলে আপনার কাছে আমার প্রশ্ন, কখনও কি Windows Install করার সময় EULA (End User License Agreement) টি পড়ে দেখেছেন??? না পড়লে পড়ে নিন।
file://localhost/C:/WINDOWS/system32/eula.txt । তাহলেই বুঝতে পারবেন।

কখনো কি virus দ্বারা আপনার কম্পিউটার আক্রান্ত হয়েছে? এর ভয়াবহতা কি আপনি একবারের জন্যও উপভোগ করেছেন? আপনি কি জানেন, বছরে কয়েক কোটিরও বেশি কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত হয়? জানেন কি, বছরে ক্ষতি হয় কোটি টাকারও বেশি শুধুমাত্র ভাইরাসের কারণে? আপনি কি জানেন, LINUX BASED OSs ARE NEVER AFFECTED BY VIRUSES? এখন পর্যন্ত কেউ লিনাক্সে চলার উপযোগী ভাইরাস সৃষ্টি করতে পারেনি, এবং পারবেও না বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। তাহলে আমরা কেন এগুলো ব্যবহারে মন দিচ্ছি না??

উবুন্টু OS টার উপর Base করে বেশ কয়েকটি ভিন্ন স্বাদের OS তৈরী করা হয়েছে। যেমন: Kubuntu, Edubuntu, XUbuntu, Ubuntu Studio, Linux Mint etc। এর মধ্যে আপনি চাইলে use করতে পারেন Kubuntu যেখানে ব্যবহার করা হয়েছে KDE (Kubuntu Desktop Environment)। অত্যন্ত চমতকার interface বিশিষ্ট এই OS টাতে আপনি পাবেন উবুন্টু থেকে কিছু বেশি সুবিধা। এছাড়াও উবুন্টু এর উপর base করে আরও একটি OS তৈরী করা হয়েছে। এই OS টার অন্যতম সুবিধা হলো এটি দেখতেও যেমন সুন্দর তেমনি অনেক codec ও pre-installed থাকে। ফলে ইন্টারনেট না থাকলেও সাধারণভাবেই সব কাজ করা যায়।

উবুন্টু অনেক সহজলভ্য। আপনি সহজেই www.ubuntu.com/downloads ওয়েব সাইট টি থেকে উবুন্টু ডাউনলোড করে নিতে পারেন। আর আপনার যদি 700 MB র এই iso image ডাউনলোডের সুযোগ না থাকে, অথবা সিডি রাইটার না থাকে, তাহলে আপনি উবুন্টুর সিডি অর্ডার করতে পারেন, ২ মাসের মধ্যে আপনার বাসায় পৌছে যাবে উবুন্টু Operating System এর একটি original CD ।

কুবুন্টু

কুবুন্টু

অর্ডার করুন ফ্রি উবুন্টু এবং কুবুন্টু সিডি:

এর জন্য সরাসরি ক্লিক করুন: https://launchpad.net/+login?origin=shipit-ubuntu । এখানে গিয়ে প্রথমে register করুন। এবং https://shipit.ubuntu.com এ গিয়ে “Request a free CD of Ubuntu Desktop Edition” এ click করুন। এখন আপনার নাম, ঠিকানাসহ যাবতীয় তথ্য পূরণ করুন। খুব ভালভাবে লক্ষ্য করুন আপনার ঠিকানা ঠিক লিখেছেন কিনা। এরপর “Submit Request” click করুন। সাধারণভাবে একাধিক CD না চাওয়াই ভালো, কারণ এতে সময় বেশি লাগে। কখনো কখনো নাও আসতে পারে।
উবু্ন্টু’র সর্বশেষ version 9.04 (code name: Jaunty Jackalope) release হয়েছিল ২০০৯ এর এপ্রিল মাসে। পরবর্তী version 9.10 (code name: Karmic Koala) release হবে ২০০৯ এর অক্টোবর মাসের ৩০ তারিখে। বের হওয়ার কয়েকদিন আগে (২৫-২৬ তারিখের দিকে) যদি আপনি pre-order করেন তবে রিলিজ হওয়ার মাত্র ১৫ দিনের মধ্যেই আপনার বাসায় চলে আসবে। সুতরাং এই OS টি পরখ করতে চাইলে pre-order করাই ভালো। লক্ষ্য রাখবেন, release হওয়ার পর প্রায় ৩ দিন আগে এবং ১ সপ্তাহ পরে Canonical (উবুন্টু এর manufacturer) কোনো অর্ডার নেয় না, ওয়েব সাইটটি বন্ধ করে দেয়। কারণ, গত কয়েকবছর ধরে প্রচুর পরিমাণ request আসে, যা একবারে পাঠানো সম্ভব হয় না। তাই ঠিকসময় পেতে হলে, ৪-৫ দিন আগে request পাঠানোই ভালো।
আপনি একই সাথে Ubuntu এবং Kubuntu pre-order করতে পারেন। register করার পরে Kubuntu পেতে চাইলে ক্লিক করুন https://shipit.kubuntu.com । Ubuntu এবং Kubuntu একই সাথে, একই রেজিস্ট্রেশন এর মাধ্যমে অর্ডার করা হলে আপনার বাসায় দুইটিই একই সাথে এসে পৌছাবে। তবে লিনাক্স মিন্ট অর্ডার করে বাসায় আনা যায়না। এটি রিলিজ হয় উবুন্টু এর যে ভার্শনের উপর বেইজ করে তৈরী করা হবে, সেই ভার্শন বের হওয়ার প্রায় ১.৫-২ মাস পর। সরাসরি www.linuxmint.com/download website টি থেকে এই OS টি ডাউনলোড করে নেওয়া যায়।

উবুন্টু এবং কুবুন্টু  LIVE CD:

উবুন্টু এবং কুবুন্টু OS এর আর একটি অত্যন্ত চমতকার সুবিধা হলো, এর সিডিটি একটি Live CD । অর্থাৎ, এই CD টি আপনি আপনার CD-ROM এ প্রবেশ করিয়ে, উবুন্টু ইন্সটল না করেই ব্যবহার করতে পারবেন। আপনার পছন্দ হলে আপনি ইন্সটল করে ব্যবহার করবেন, পছন্দ না হলে আপনি install করবেন না। উইন্ডোজ যেমন পরখ করতে হলে আগে ইন্সটল করে নিতে হয়, উবুন্টুতে সেরকম কিছু করতে হয় না। এর ফলে আপনার কম্পিউটারের কোনো পরিবর্তন হয় না। উইন্ডোজ কি সাধারণভাবে এরকম সুবিধা দেয়?!
তাছাড়া সিডি ছাড়াও আপনি লিনাক্স ইন্সটল করতে পারেন।

সিডি ছাড়াই লিনাক্স ইনষ্টল করা:

সাধারণত লিনাক্স ঘরনার অপারেটিং সিস্টেম ইনষ্টল করতে হয় সরাসরি সিডি থেকে। কিছু লিনাক্স ডিষ্ট্রো উইন্ডোজ থেকেও ইনষ্টল করা গেলেও তা সিডি থেকে চালাতে হয়, হার্ডডিক্স থেকে চালানো সুযোগ নেই। আপনি যদি ইন্টারনেট থেকে ইমেজ ডাউনলোড করেন বা অন্যকোন ভাবে আপনার হার্ডডিক্সে লিনাক্স ঘরনার কোন অপারেটিং সিস্টেমের ইমেজ থাকে তাহলে অপারেটিং সিস্টেমটি ইনষ্টল করতে হলে ইমেজটি সিডিতে বার্ন করে তারপরে সিডি থেকে ইনষ্টল করতে হয়। তবে ইউনিভার্সেল নেট বুট ইনষ্টলার বা নেটবুটইন সফটওয়্যার দ্বারা লিনাক্স ঘরনার অপারেটিং সিস্টেম হার্ডডিক্স বা ফ্লাশ ডিক্স থেকেই ইনষ্টল করতে পারবেন। এজন্য https://unetbootin.sourceforge.net থেকে এই সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করে নিন। সফটওয়্যারটি পোর্টেবল তাই ইনষ্টল করার প্রয়োজন নেই। এই সফটওয়্যার ৩২টির মত লিনাক্স ডিষ্ট্রোর প্রায় সবগুলো সংস্করণই এই সমর্থন করে। এই সফটওয়্যার দ্বারা লিনাক্স ডিষ্ট্রোর লাইভ ইউএসবি ডিক্সও তৈরী করা যাবে।